Thursday, March 26, 2015

স্টিফেন হকিং এর “A Brief History of Time” – কি আছে এতে?

মহাকাশ বিজ্ঞান এবং মহাবিশ্ব বিষয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ “A Brief History of Time” বা “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস”। যেটি লিখেছেন আধুনিক পদার্থবিদ্যা এবং সৃষ্টিতত্ত্ব (Physics & Cosmology) সম্পর্কিত বিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী Stephen W. Hawking
এই বইটি সৃষ্টিতত্ত্ব ও মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্যতম একটি বিশাল জ্ঞানের উৎস। বিজ্ঞানের প্রতি আসক্তি থেকে বইটি পড়ার এবং কিছু জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছি। যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা সংক্ষেপে সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি।
আমার এই লেখার সকল বিষয়ের রেফারেন্স এই বইটিই।
বইটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন এখান থেকে।
“A Brief History of Time” - Stephen W. Hawking (1.44 MB)
“কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” – বঙ্গানুবাদঃ শত্রুজিৎ দাসগুপ্ত (5.89 MB)

বিভিন্ন অধ্যায়ে এই বইটিতে যা যা বলা হয়েছে তা তুলে ধরছি

  • মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের চিত্র (Our Picture of the Universe)
    এই মহাবিশ্ব মুলত দেখতে কেমন। বিজ্ঞানের শুরুর সময় থেকে বিভিন্ন দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন এই মহাবিশ্ব কে কিভাবে দেখেছেন। কি ধারনা করেছেন, কি তত্ত দিয়েছেন, কোনটি সঠিক ছিল আর কোনটি ছিল ভুল। এরপর সময়ের সাথে সাথে আধুনিক বিজ্ঞানীগন এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে কি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়েছেন এবং আমরা বর্তমানের মহাবিশ্বের যে অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত সেটি কিভাবে আবিষ্কৃত হল এই সম্পর্কে বইয়ের এই অংশে বর্ননা করা হয়েছে।
  • স্থান ও কাল (Space and Time)
    আমাদের কাছে এই মহাবিশ্বের একটি গুরুত্বপুর্ন ও বিস্ময়কর মাত্রা হচ্ছে সময়। কিভাবে স্থান ও কালের মাত্রা একত্রে জড়িয়ে আছে, কিভাবে স্থান-কাল এই দুটির সাহায্যে কোন ঘটনার অবস্থান ব্যাক্ষা করা যায়, কিভাবে স্থান ও কাল পরষ্পরকে প্রভাবিত করে এই বিষয়ের উপরে বইয়ের এই অংশ টি।
  • প্রসারমান মহাবিশ্ব (The Expanding Universe)
    বিগব্যাং থেকে এই মহাবিশ্বের শুরু। তারপর থেকেই এই মহাবিশ্ব সদা প্রসারিতি হয়ে এসেছে এবং এখনো হচ্ছে। কি কি সমস্যা অতিক্রম করে বিভিন্ন পরীক্ষালদ্ব ফলাফলের দ্বারা এই ব্যাপার টি প্রমানিত করা হয়েছে তা এখানে বলা হয়েছে।
  • অনিশ্চয়তাবাদ (The Uncertainty Principle)
    অনিশ্চয়তাবাদ কনাবাদী বলবিদ্যার (Quantum mechanics) একটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ। নিউটনের গতিবিদ্যা ও বলবিদ্যা শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও বৃহৎ বস্তুর ক্ষেত্রে কার্যকরী। যখন আমরা ইলেকট্রন, প্রোটন, ও ফোটনের মত অতি ক্ষুদ্ ও আলোর গতির কাছাকাছি বস্তুর ক্ষেত্রে কাজ করতে যাব তখন নিউটনীয় বলবিদ্যা ধ্বসে পরে। সেখানে দরকার আইনস্টাইনের ব্যাপক আপেক্ষবাদ (Theory of relativity) তত্ত্বের প্রয়োগ। আর এই সকল ক্ষুদ্র কনার বিজ্ঞানের জগৎ হচ্ছে কনাবাদী বলবিদ্যার (Quantum mechanics). এই অতি ক্ষুদ্র কনার জগতে আছে বিশাল এক সমস্যা। যেটিকে বলা হচ্ছে অনিশ্চয়তাবাদ। এই তত্ত্ব অনুযায়ী অতি ক্ষুদ্র কনাদের অবস্থান ও গতি কখনোই একসাথে সঠিক ও নির্ভুল ভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। যদি গতি খুব বেশী সুক্ষতায় নির্নয় করা হয় তবে তাদের অবস্থানের ক্ষেত্রে আসবে একটা বৃহৎ পরিসর। আর জতি অবস্থান নির্নয় করা হয় তবে অবস্থানের সুক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকবে গতির নির্ভুলতা।
    কেন দুটি পরিমাপ নির্ভুল ভাবে নিরুপন করা সম্ভব নয় আর কিভাবেই বা তৈরী হচ্ছে এই অনিশ্চয়তা তা এই অধ্যায়ের আলোচ্য অংশ।
  • মৌলকনা ও প্রাকৃতিক বল (Elementary Particles and the Forces of Nature)
    আমরা সাধারন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যা জানি তা হল ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন হল সর্বশেষ মৌল কনা। হ্যা এটা সত্য। তবে এই আবিষ্কারের পর অনেক বছর পেরিয়েছে, অনেক নতুন তথ্য যোগ হয়েছে মৌলকনার বিজ্ঞানে। এখন আর মৌলকনা এই তিনটিই নয়। এগুলোও আরও ক্ষুদ্র অংশ ও কনা দিয়ে গঠিত। এখন মৌলকনার লিস্টে আছে অনেকগুলো কনা। এমনকি এমন ক্ষুদ্র সব কনা আবিষ্কৃত হয়েছে যার মাত্রা (Dimension) (দৈর্ঘ / প্রস্থ / উচ্চতা) এগুলো আমাদের দৃশ্যমান আলোর সবচেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘের আলোর (বেগুনী) তরঙ্গদৈর্ঘের চেয়েও কম। অর্থাৎ ডারউইনের বিবর্তনবাদের ধারায় যদি কোন দিন মানুষের চোখ আরো শক্তিশালী ও সংবেদনশীল না হয় তবে আমরা এসব কনাকে কখনোই চোখে দেখতে পাব না।
    চারটি মুল প্রাকৃতিক বল এই মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করছে। এই বলগুলোর কারন ও এই ধরনের অতি ক্ষুদ্র কনা। এই প্রাকৃতিক বলগুলোর কোনটির জন্য কি কনা দায়ী, তাদের স্বরুপ ও বৈশিষ্ট গুলোর নিয়েই এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
  • কৃষ্ণগহ্বর (Black Holes)
    এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে অধরা অংশটি হল কৃষ্ণগহ্বর। আইনস্টাইনের তত্ব অনুযায়ী যদি আলোর চেয়ে বেশী গতি সম্পন্ন কোন কনা বা তরঙ্গ না থাকে তবে কৃষ্ণগহ্বর কে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। না দেখা গেলেও বিভিন্ন পরোক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা বের করেছেন কিভাবে একটি বৃহৎ আকারের তারকা বা নক্ষত্র জীবনের অন্তিম মুহুর্তে জ্বালানী সংকটে পরে কৃষ্ণগহ্বর এর সৃষ্টি হয়। এই কৃষ্ণগহ্বর ই একমাত্র স্থান যেখানে পদার্থবিদ্যার সকল সূত্র ভেঙ্গে পড়ে, যাকে বলা হয় অনন্যতা বা সিঙ্গুলারিটি (singularity). এর ভেতর থেকে কোন তথ্যই বেড়িয়ে আসতে না পাড়লেও মানব মস্তিস্ক ও বিজ্ঞান কিভাবে এর অস্তিত্ব টের পেয়েছে এবং এর সম্পর্কে এত তথ্য দিচ্ছে তার বিস্তারিত আছে এই অধ্যায়ে।
  • কৃষ্ণগহ্বর অত কালো নয় (Black Holes Ain't So Black)
    এই কথাটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষ্ণগহ্বর যত অধরাই হোক না কেন মানব মস্তিস্ক তার কিছু তথ্য ঠিকই বের করে আনতে পেরেছে। আলোক রশ্মি যেটি কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষন বলের সীমানার ভেতরে চলে যায় সেটি বেড়িয়ে আসতে না পারলেও যেটি ভেতরে না গিয়ে তার কিনারা ঘেষে বেড়িয়ে যায় তার আচরন কেমন? কৃষ্ণগহ্বর এর ভেতরে যে এত বস্তু ও শক্তি প্রবেশ করছে সেগুলো কি হচ্ছে? সেগুলো কি ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে নাকি কৃষ্ণগহ্বরের শক্তি বৃদ্ধি করছে? এসব প্রশ্ন এবং বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এর উত্তর গুলো এখানে আছে।
  • মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিনতি (The Origin and Fate of the Universe)
    এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় এটি। এখানেই বিস্তারিত ব্যাক্ষা করা হয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মুহুর্ত অর্থাৎ “বৃহৎ বিস্ফোরন” বা “Big Bang” তত্ত্বটি। কিভাবে অসীম ভর ও তাপমাত্রা সম্পন্ন একটি “প্রায় শুন্য” আয়তন থেকে ( V → 0 ) আজকের এই মহাবিশ্বে আমরা আছি, আর কিভাবে এই মহাবিশ্বের সমাপ্তি ঘটবে। মহাবিশ্বের সমাপ্তি কিভাবে ঘটবে তা নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাবনা আছে যা নির্ভর করছে মহাবিশ্বের আমাদের না জানা কিছু সাংখিক মানের উপর। এসব মানের উপরই নির্ভর করছে একসময় “মহা সংকোচন” এর মাধ্যমে সব কিছু ধংস্ব হবে নাকি অসীম কাল পর্যন্ত এই মহাবিশ্ব আয়তনে বেড়েই চলবে।
  • সময়ের তীর, ওয়ার্ম হোল এবং সময় পরিভ্রমন (The Arrow of Time, Wormholes and Time Travel)
    আধুনিক পদার্থবিদ্যায় সময়কে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতার মত আরেকটি মাত্রা (Dimension) হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু পার্থক্য এই যে আমরা সময়ের মাত্রায় পরিভ্রমন করতে পারি না। মুলত সময়ের মাত্রা টা কিরুপ? আসলেই কি সময় একমুখী? সময়ের অভিমুখে যাত্রা কি অসম্ভব নাকি পর্যাপ্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আবিষ্কারের পর আমরাও সময়ের অভিমুখে যাত্রা করতে পারব? খুব সহজে আমরা যেই সময়কে দেখছি ও ব্যবহার করছি, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোনে এটির জটিলতা ও এই জটিলতার সমাধান কি হতে পারে তাই এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়।
  • পদার্থবিদ্যাকে ঐক্যবদ্ধ করা (The Unification of Physics)
    এই মহাবিশ্বের সম্পর্কে একবারেই একটি সয়ংসম্পুর্ন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা বেশ দুরহ ছিল। তাই পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন অংশকে ভাগ করে নিয়ে এক একটি চুড়ান্ত তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে তাদের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি একক তত্ত্বের আবিষ্কার এখন পদার্থবিজ্ঞানের মুল লক্ষ্য। পদার্থ বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সাথে সাথে বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন ভাগে পদার্থ বিজ্ঞান এই মহাবিশ্বের গতি প্রকৃতি ও তার আচরন নির্ধারনকারী তত্ত্ব-সুত্র সমূহ আবিষ্কার করছে। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব ও সাধারন গতিবিদ্যা (Gravity & General Mechanics) , এর পর এসেছে আইনস্টাইনের আলোর গতির ধ্রুবকত্ত্ব ও চরম গতিতে অর্থাৎ আলোর গতির কাছাকাছিতে ( V → c ) বিশ্ববিখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্ব (General & Special Theory of relativity). এর পর তুলনামুলক ভাবে নতুন তত্ত্ব কনাবাদী বলবিদ্যা (Quantum Mechanics). যাতে অতি ক্ষুদ্র কনা যা পদার্থ ও শক্তির জন্য দায়ী তাদের আচরন ও বৈশিষ্ট ব্যাক্ষা করা হচ্ছে। এই তত্ত্ব গুলোকে একত্রিত করে মহাবিশ্বের রুপরেখা প্রদান কারী একটি তত্ত্ব আবিষ্কার এখন পদার্থবিজ্ঞানীদের অন্যতম মুল লক্ষ্য।
    মহাবিশ্বের মুল চারটি বল মহাকর্ষীয় বল (Gravitational Force), দূর্বল নিউক্লীয় বল (Weak Nuclear Force), সবল নিউক্লীয় বল (Strong Nuclear Force) এবং তাড়িত চৌম্বক বল (Electro-Magnetic Force) এই চারটি বল এই মহাবিশ্বের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক। এই বল গুলোর কারনেই পদার্থ, শক্তি, পদার্থ থেকে শক্তি এই গ্রহ নক্ষত্র সব কিছু। এই বল গুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছে তবে এদের একেকটি এক এক ক্ষেত্রে কার্যকরী গানিতিক সমীকরনের সাহায্যে প্রকাশ করা হচ্ছে। এই চারটি বলের প্রকৃতি যখন একসাথে একটি তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাক্ষা করা যাবে তখন সেই তত্ত্বটি কে বলা হবে “মহান ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব” বা “Grand Unified Theory” (GUT). এই তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যাবে মহাবিশ্বের সকল অংশের কার্যকারীতা।
    কিন্তু এখানেও দেখা দেবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিখ্যাত “অনিশ্চয়তার সুত্র” যাতে আমরা যে প্রতিটি জিনিস ই নির্ভুল ভাবে বুঝতে পারছি তার একটি অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এই সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, তথ্য ও সুত্র কে একীভুত করে এমন একটি বৈজ্ঞানিক ফলাফল দাড় করানোই পদার্থবিজ্ঞানীদের লক্ষ্য যার সাহায্যে আমরা আমাদের অবস্থান, অস্তিত্ব ও পারিপার্শিক ঘটনাবলী সম্পুর্নরুপে বুঝতে পারব।
সবাইকে ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment